ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf যদি আপনি খুঁজে থাকেন তবে বলবো আপনি একেবারে সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনি একটু ধৈর্য ধরে আমারদের লেখা আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন তাহলেই আপনি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগটি বেশ প্রচলিত একটি রোগ।
এই রোগ কে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সুশৃংখল জীবন পদ্ধতি এবং সঠিক নিয়মে সঠিক ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করার জন্য একটি সঠিক ডায়েট চার্ট বা সঠিক খাদ্য তালিকা প্রয়োজন। আর তাই আপনার সে প্রয়োজনকে সামনে রেখেই কিছু ডায়েট চার্ট বা খাদ্য তালিকা দেওয়া হল। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন মনোযোগ দিয়ে একটু দেখে নেওয়া যাক ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট বা খাদ্য তালিকা।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf
- ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf
- ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
- ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল
- ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
- ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কি না
- ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
- ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস ফুড চার্ট
- শেষকথাঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ যার দ্বারা পুরো পৃথিবী ব্যাপী লক্ষ লক্ষ
মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার কারণে এই
রোগটি হচ্ছে। তাই এই রোগে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে এরকম খাবার গুলো
পরিহার করে চলা জরুরী। কিন্তু শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শরীরে
প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা কমে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই প্রত্যেক
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য একটি সুন্দর খাবার রুটিন প্রয়োজন আর সেই প্রয়োজনীয়তাকে
উদ্দেশ্য করে আপনাদের সামনে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf দেওয়া হলো।
- সকাল ৬ টাঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুন। এর সাথে এক চামচ মেথি গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন এতে আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং একই সাথে খাবার হজমেও সহায়তা করবে।
- সকাল ৭ টাঃ এক থেকে দুইটি অল্প ক্যালোরিযুক্ত বিস্কুট সাথে এক কাপ গ্রিন টি বা চিনি ছাড়া কালো চা।
- সকাল ৮.৩০ টাঃ একটি সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন যা প্রোটিনের জন্য ভালো উৎস হিসেবে কাজ করবে। সাথে সিদ্ধ আটার রুটি দিয়ে সিদ্ধ বা হালকা ভাজা সবজি খেতে পারেন।
- সকাল ১০.৩০টাঃ একটি যে কোন ছোট ফল অথবা চিনি ছাড়া বাটার মিল্ক খেতে পারেন।
- দুপুর ১ টা: ১ থেকে ২ টা রুটি, এক কাপ লাল চালের ভাত অথবা সাদা ভাত, ৬০ গ্রাম পরিমাণ রান্না করা মাছ অথবা মাংস তবে তা যেন ফ্যাট ছাড়া হয়, এক কাপ মাঝারি ঘন ডাল এবং এক কাপ পাতাযুক্ত শাকসবজি আর দেড় কাপ পরিমাণ অন্যান্য সবজি।
- বিকেল ৪টা: চিনি ছাড়া এক কাপ লাল চান অথবা গ্রিন টি এর সাথে এক থেকে দুইটি টোস্ট বিস্কুট নিতে পারেন।
- রাত ৭টা: দুটি সিদ্ধ আটার রুটি সাথে এক বাটি ডাল এক বাটি রান্না করা সবুজ শাকসবজি ও এক প্লেট সালাদ।
- রাত ৯ টা: ঘুমানোর পূর্বে চিনি ছাড়া এবং ক্রিম মুক্ত এক কাপ কুসুম গরম দুধ।
আরো পড়ুনঃ Atoz premium খেলে কি মোটা হয়
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কি কি খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ তা জেনে রাখা অতিব জরুরী।
কেননা সঠিক খাদ্য নির্বাচন শুধুমাত্র রক্তে শর্করা মাত্রাকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে
একই সাথে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বাড়াতে এবং সামগ্রিকভাবে ভালো স্বাস্থ্য বজায়
রাখতেও সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগী যদি ভুল খাদ্যাভ্যাস দ্বারা চলতে থাকে তবে
রোগীর স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগীদের শারীরিক ও
মানসিক সুস্থতার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকাটি।
- চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবারঃ চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি করে যা ডায়াবেটিসে জটিলতা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত চিনি খেলে দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব তৈরি হতে পারে কারণ এসব খাবারে ফাইবার ও প্রোটিনের মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান গুলো অল্প পরিমানে থাকে।
- লবণঃ অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই অতিরিক্ত লবণ অবশ্যই পরিহার করা উচিত বিকল্প হিসাবে লবণের পরিবর্তে প্রাকৃতিক মসলা বা হার্বস ব্যবহার করতে পারেন।
- চর্বিযুক্ত বা তেলে ভাজা খাবারঃ বেশি চর্বিযুক্ত তেলে ভাজা খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় এবং আরো অনেক রকম স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয়। আর ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি চর্বিযুক্ত খাবার রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতাকে বৃদ্ধি করে তাই অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীদের চর্বিযুক্ত বা তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
- দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারঃ দুধ বা দুগ্ধ জাত খাবারে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি করতে পারে এবং রক্তে গ্লকুজের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করে লো ফ্যাট বা ফ্যাট নেই এরকম দুধ দুগ্ধজাত খাবার বেছে নেওয়া জরুরী।
- কিসমিসঃ কিসমিসে চিনির পরিমাণ খুবই বেশি থাকে যা রক্তে শর্করা মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিসমিস খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
- অ্যালকোহল বা বেশি চিনিযুক্ত পানীয়ঃ অ্যালকোহল বা বেশি চিনিযুক্ত পানীয় রক্তে গ্লকুজের পরিমাণকে হঠাৎ বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারে যা ডায়াবেটিস জটিলতা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই অ্যালকোহল বা বেশি চিনিযুক্ত পানীয় ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলা উচিত।
- প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ খাবারঃ প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ খাবার এগুলোর মধ্যে রয়েছেন মধু খেজুর আখের তৈরি গুড় ইত্যাদি। এই খাবারগুলো অনেকে নিরাপদ মনে করেন কিন্তু এই খাবারগুলো উচ্চ গ্লুকুজযুক্ত তাই ডায়বেটিস রোগীদের জন্য তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ফল
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন এর তথ্য মতে ভিটামিন এবং ফাইবার রয়েছে এমন
ফল ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিত কারণ এসব ফল টাইপ টু ডায়াবেটিস দূরে রাখতে
সাহায্য করে। তাই জেনে নিন এমন দশটি ফল যা আপনার থেকে ডায়াবেটিস কে দূরে রাখতে
সাহায্য করবে।
- বেদনা: বেদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়ে থাকে এছাড়াও এর ফ্রি রেডিক্যাল ডায়াবেটিসের মোকাবেলায় সাহায্য করে।
- আঙ্গুর: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আঙ্গুর একটি কার্যকরী ফল কারণ এতে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল রেসভারেট্রল যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- আপেল: ডায়াবেটিসের ঝুকিয়েলাতে আপেল খুবই কার্যকরী তাই ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই রোজ একটি করে আপেল খান টা একটু ডায়াবেটিস রোধ করতেও আপেল দারুণ কাজ করে থাকে।
- ব্লুবেরি : ব্লুবেরিতে রয়েছে অ্যান্থসায়ানিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- পেয়ারা: পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার এবং এর পাশাপাশি এটি লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর অন্তর্ভুক্ত তাই এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- চেরি ফল: চেরি ফল ডায়াবেটিস রোধে খুবই কার্যকরী কারণ এতেও রয়েছে অ্যান্থসায়োনিন যা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে।
- পেঁপে: পেঁপেতে রয়েছে ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তাই এটি ডায়াবেটিস রোধে খুবই কার্যকর শুধু ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রেই নয় এটি হার্ট ও নার্ভের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী।
- কমলালেবু: কমলা লেবুতে রয়েছে ফ্ল্যাভনলস ও ফেনোলিক এসিড যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী।
- তরমুজ: তরমুজে রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্তে ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এর ফলে ডায়াবেটিস এর কারণে কিডনির ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে তরমুজ।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যা অভ্যাস যেমন ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে একই সাথে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেবে এবং শারীরিক
ও মানসিকভাবে ভালো থাকতেও সাহায্য করবে। তাই একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য
তালিকা কেমন হবে বা ডায়বেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে
বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।
একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য প্রধান পাঁচটি খাবার প্রয়োজন এসবের
মধ্যে হচ্ছে এবং ফলমূল ও শাকসবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, শ্বেতসার জাতীয়
খাবার, দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার এবং বিভিন্ন ধরনের তেল মাখন ঘি। তবে এসব খাবার
গুলো কখন কতটুকু কি পরিমানে খাবেন তা আপনার শারীরিক কন্ডিশন এর উপর নির্ভর করে
তাই একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এগুলো ঠিকঠাক করে নেওয়া
জরুরী।
আমরা এখানে পাঁচটি গ্রুপের প্রতিটির উপকারিতা কোন গ্রুপ থেকে কি পরিমানে খাবার
খাবেন বা খেতে পারেন তা সাধারণ তথ্য হিসাবে তুলে ধরেছি।
১। ফল ও সবজি: ডায়াবেটিস থাকলে যে আপনি ফলমূল বা সবজি খেতে পারবেন না এমন কোন
কথা নেই। দেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের যোগান দিতে
যত রকমের রংবেরঙের ফল খাবেন ততই ভালো। তবে তুলনামূলক কম শর্করাযুক্ত শাকসবজি ও
ফলমূল বেছে নেওয়া জরুরী। যেমন এক ফালি বাঙ্গি বা জাম্বুরার সাথে অল্প পরিমাণ
টক দই মিশে খেতে পারেন খিচুড়ি পাস্তা বা অন্যান্য রান্নায় মটরশুটি বরবটি গাজর
শিম এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। কম শর্করাযুক্ত শাকসবজির উৎস হিসেবে পালং
শাক বাঁধাকপি ফুলকপি ব্রকলি মাশরুম শসা লেটুস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
২। শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার: ভাত রুটি, আলু, নান রুটি, পাস্তা পাউরুটি, কাঁচা কলা
এই খাবারগুলো মূলত শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার। শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার
গুলো আমাদের শরীরে ভেঙ্গে গ্লকোজ তৈরি হয় আর এই গ্লকোজ আমাদের শরীরে
কোষগুলোর জ্বালানি হিসেবে কাজ করে থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে
সমস্যা হচ্ছে যে কিছু কিছু শ্বেতসার জাতীয় খাবার দ্রুত রক্তে গ্লকোজের
পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয় যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে
যায়।
তাই শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার টোটালি বাদ দেওয়া উচিত নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের
জন্য কেমন শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার খাবেন তা বর্ণনা করছি। লাল আটা দিয়ে রুটি
পাস্তা বা নুডুলস তৈরি করে খেতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা থেকে বানানো হোল
গ্রেইন বা মাল্টিগ্রেইন রুটি বা পাউরুটি। খোঁসা সহ সিদ্ধ করা মিষ্টি আলু। তবে
উল্লিখিত খাবারগুলো কি পরিমাণে কতটুকু খাবেন তা অবশ্যই একজন ডায়াবেটিস
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
৩। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়ামের দরকার হয়। যা আমরা এই দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার হতে পেয়ে থাকি।
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই খাবারটি সম্পূর্ণ খাবার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত
হবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন এই দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার গুলো চিনি মুক্ত
হয়।
ডায়াবেটিস রোগীরা যে সকল দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেভাবে খেতে পারবেন তা
হচ্ছে এক গ্লাস দুধ সরাসরি খেতে পারেন এছাড়াও নাস্তায় ওটস এর সাথে মিশিয়েও
দুধ খেতে পারেন। দুধের তৈরি পনির গাজর ও শসার সাথে নাস্তা হিসেবে খেতে পারেন।
দুধের তৈরি টক দই যেকোনো ফল বা তরকারির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। দুধের তৈরি
মাঠা লাচ্ছি বা শুধুই সাধারণ দই নাস্তার সাথে সন্ধ্যায় খেতে পারেন।
তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন উপরোক্ত খাবার গুলো যেন চিনিমুক্ত হয় এবং একজন
অভিজ্ঞ ডায়াবেটিস ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
৪। তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার: ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অল্প
পরিমাণে তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার দেওয়া যেতে পারে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের
জন্য যেভাবে দেওয়া যেতে পারে তা হচ্ছে প্রতিদিন সালাদের সাথে অল্প পরিমাণে
অলিভ অয়েল তেল দিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও সাধারণ মাখন এর পরিবর্তে পিনাট বার
টোস্টের সাথে খেতে পারেন। এই খাবারগুলো কি পরিমাণে কতটুকু খাবেন তা অবশ্যই একজন
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
৫। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিন অল্প পরিমাণে প্রোটিন
সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন যেমন সকালের নাস্তায় এক মুষ্টি পরিমাণ বাদাম খেতে
পারেন। এছাড়াও প্রয়োজনে এটি সালাদের সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন। ডিম খাওয়ার
জন্য ডিমকে পোচ বানিয়ে বা ভাজি করে অথবা সিদ্ধ করে খেতে পারেন। কম তেল মশলাই
রান্না করা গ্রিল ও বেক করা মাছ মাংস অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
তবে উপরোক্ত খাবার গুলো কি পরিমানে খাবেন তা আপনার শারীরিক অবস্থার উপর
নির্ভর করে তাই একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাবার পরিমাণ ঠিক
করে নেওয়া জরুরী।
আরো পড়ুনঃ পেভিসন ক্রিম কিসের কাজ করে
৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কি না
৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কিনা এর প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়
যে, এটি পুরোপুরি কন্ট্রোল করা যাবে কিন্তু নিরাময় করা যাবে না। কারণ
ডায়াবেটিস একটি মানবদেহের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা। ৭২ ঘন্টায় ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিয়ম তান্ত্রিক জীবন যাপনসহ বিশেষ কিছু
ব্যায়াম এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস কে ওষুধ বা ইনসুলিন এর
সাহায্য ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যারা দীর্ঘদিন যাবত ডায়াবেটিস রোগে ইনসুলিন নিচ্ছিলেন
কিন্তু বর্তমানে তারা কোন ধরনের ওষুধ এবং ইনসুলিন ছাড়াই শুধুমাত্র
নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের মাধ্যমে এবং ব্যায়াম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের দ্বারা
সুস্থ আছেন। তাই আপনি যদি ওষুধ এবং ইনসুলিন ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে
চান তবে অবশ্যই একজন ডায়াবেটিস অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ থেকে নিয়মতান্ত্রিক
জীবনযাপন এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ৭২ ঘন্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
সম্ভব।
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে প্রকৃতিতে আমরা কিছু খাদ্য
উপাদান পেয়ে থাকি সেই প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদানগুলো দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে
ডায়াবেটিস কমানো সম্ভব। এই খাদ্য উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে মেথি, করলা,
আমলকি, জিরা ইত্যাদি। এছাড়াও ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে আরো
কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো বিস্তারিত আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
- মেথি: রক্তে সরকারের মাত্রা কমানোর জন্য মিথি যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে তাই প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর জন্য খাবারের সাথে মেথি খেতে পারেন অথবা মেথি ভেজানো পানি পান করতে পারেন।
- আমলকি: ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে আমলকি ব্যবহার করতে পারেন। আমলকি কে গুঁড়ো করে অথবা আমলকির রস ব্যবহার করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
- করলা: করলার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে করলা বা করলার রস ব্যবহার করতে পারেন।
- জিরা: জিরা ভিজিয়ে রাখা পানি পান করার দ্বারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে। তাই আপনি ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়ে হিসাবে জিরা ভেজানো পানি পান করতে পারেন।
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ
করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ আপনার ডায়াবেটিস যদি
অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে থাকে তবে প্রাকৃতিকভাবে তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নাও
হতে পারে তখন ডাক্তার আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিবেন যে আপনার ডায়াবেটিস কিভাবে
নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
আপনি যদি ঘরোয়া উপায়ে ডায়াবেটিস কমাতে চান তবে আপনাকে নিয়ম তান্ত্রিক
জীবন যাপন করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচুর শাকসবজি ও ফল এবং হোল গ্রেইন
বা শস্যজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত
ব্যায়াম হিসাবে অন্তত সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মাঝারী ধরনের শারীরিক ব্যায়াম
করতে হবে। ধূমপানের মতো বাজে অভ্যাস থাকলে অবশ্যই তা পরিহার করতে হবে কারণ
এটি ডায়াবেটিসের মাত্রা অথবা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
খাবার গ্রহণের পরে নিজেকে ক্রিয়াশীল রাখতে হবে অর্থাৎ শুয়ে থাকা যাবে না
অন্তত ৫০০ ধাপ হাঁটা অভ্যাস করতে হবে। ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে
সঠিক রান্নার তেল নির্বাচন করতে হবে। যেসব ভোজ্য তেলে ট্রান্স ফ্যাট অথবা
ইমব্যালেন্সড ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড থাকে সেগুলো পরিহার করে সরিষার তেল বা
নারিকেল তেল অথবা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বেছে নিতে পারে।
ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে সালাদে পেঁয়াজ খাওয়ার অভ্যাস করতে
পারেন কারণ পিয়াজি খেলে চার ঘণ্টার মধ্যে রক্তে শর্করা পরিমাণ কমানো সম্ভব ।
তাই আমরা বলতেই পারি যে কাঁচা পেঁয়াজ একটি ডায়াবেটিকস বান্ধব খাবার।
উপরোক্ত উপায়গুলো অবলম্বনের মাধ্যমে ঘরোয়া ভাবে ডায়াবেটিস কমানো সম্ভব।
তবে যদি আপনার ডায়াবেটিস অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে থাকে তবে এসব উপায় অবলম্বন
না করে অবিলম্বে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস ফুড চার্ট
নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের দ্বারা টাইপ-২
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিছু সুষম
খাবার চার্ট নিচে দেওয়া হইল যেগুলো খাওয়ার দ্বারা টাইপ-২ ডায়াবেটিস
রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
- ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল কমলা নাশপাতি তরমুজ বেরি ইত্যাদি ফল।
- বাদাম জাতীয়র মধ্যে রয়েছে আখরোট, পেস্তা বাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি।
- বিভিন্ন সবজির রস মিষ্টি ছাড়া চা ব্ল্যাক কফি ইত্যাদি পানীয় আকারে খেতে পারেন।
- সবজি হিসেবে ফুলকপি, পালং শাক, শসা,ব্রকলি ইত্যাদি খেতে পারেন।
- স্বাস্থ্যকর তেলের উৎস হিসাবে বা চর্বি হিসাবে জলপাই তেল তিলের তেল কানোলার তেল ইত্যাদি খেতে পারেন।
তবে আপনি একটি নিরাপদ খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য অবশ্যই একজন খাদ্য
বিশেষজ্ঞ বা ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাদ্য তালিকা তৈরি
করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ eno খাওয়ার অপকারিতা কি হতে পারে
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf সম্পর্কিত আর্টিকেলটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যর জন্য। এটি কোন ওষুধ বা চিকিৎসার অংশ নয় এবং এটি ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশন বা পরামর্শের বিকল্পও হিসাবে কাজ করবে না। তাই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তথ্য ব্যবহারজনিত কোন ক্ষয়-ক্ষতির জন্য লেখক বা ওয়েবসাইট কোনভাবেই দায়ী নয়।
শেষকথাঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf
প্রিয় পাঠক, ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্ট pdf সংক্রান্ত আর্টিকেলটিতে
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য যে খাবারগুলো নিরাপদ সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে
উল্লেখ করা হয়েছে। পরিশেষে বলা যায় যে, নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, স্বাস্থ্যকর
খাদ্য-অভ্যাস, হাঁটাহাঁটি ও রেগুলার ব্যায়ামের দ্বারা ডায়াবেটিস অনেকটাই
নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
আমরা মনে করি আপনি যদি একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তবে এই
আর্টিকেলটি আপনার জন্য যথেষ্ট উপকারে আসবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত রেগুলার
আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি অবশ্যই নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তবে তা অবশ্যই আপনার পরিচিত
বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন এবং কোন ভুল-ভ্রান্তি
হয়ে থাকলে কমেন্টে জানিয়ে দেবেন।



ব্লগ টু বাজারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url